আউটসোর্সিং বদলে দিল জীবন

সংসারের রোজকার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। তখন সুলতানা পারভীন ভাবতেন, কীভাবে তিনি স্বামীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। যাতে তাঁর ওপর চাপ কমে। নানা ভাবনার মধ্য দিয়ে হঠাৎ উঁকি দিল ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করার কথা। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে প্রচুর প্রতিবেদন পড়েছেন। এবার তা কাজে লাগাতে প্রশিক্ষণ নিলেন হাতে-কলমে। প্রশিক্ষণের সময়েই খোঁজ মিলল কাজের। এরপর নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে এগিয়ে গেলেন। ঘরে বসেই আয়ের জাদুমন্ত্র পেয়ে গেলেন। সংসারের খরচের বাড়তি চাপ ভালোভাবে সামলে তিনি আজ সফল। চট্টগ্রামের সুলতানা পারভীনের সফলতার গল্পটা এ রকমই।
সুলতানা পারভীন বলেন, ‘শুরুতে টাকার চেয়েও নিজের অভিজ্ঞতা বাড়াতে চেষ্টা করেছি। যা পরবর্তীকালে আমার কাজের গতি বাড়াতেও সাহস জুগিয়েছে। আর আমার কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার স্বামী।’
২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট এলাকার বিকন আইটি নামক প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সিংআউটসোর্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। নভেম্বর মাসেই তিনি কাজের জন্য প্রোফাইল তৈরি করেন। আর ডিসেম্বরেই পেয়ে যান প্রথম কাজ। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) কাজ দিয়ে হাতেখড়ি। প্রথম কাজের পরে প্রতিষ্ঠানের আঙিনা ছেড়ে ফিরে আসেন ঘরে। সেখানে সংসার, ছেলেমেয়ের পরিচর্যার পাশাপাশি চলতে থাকে তাঁর কাজ। জীবনবৃত্তান্ত তৈরি, রেসিপি লেখা, বইয়ের পর্যালোচনা লেখা ইত্যাদি কাজ করতে থাকেন সমান তালে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করেন ওই প্রতিষ্ঠানে।
স্বামী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। স্বামী বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমান্ডার এম আলীম। চট্টগ্রামের সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ‘এ’ লেভেলে পড়ছে মেয়ে মালিহা এবং ‘ও’ লেভেলে পড়ছে ছেলে মাহির। ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতিবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন সুলতানা।
আউটসোর্সিংয়ের প্রতি আগ্রহ প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমি প্রথম আলোতে আউটসোর্সিংয়ের ওপর বেশ কিছু লেখা পড়েই উদ্বুদ্ধ হয়েছি। এরপর যখন দেখলাম নানা কারণে বাইরে গিয়ে কাজ করার তেমন সুযোগ নেই তখন সেই জানাটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম।’ আউটসোর্সিংয়ে যে সুলতানা বেশভালো কাজ করছেন, তার স্বীকৃতি মিলেছে এবার। বেসিস আউসোর্সিং পুরস্কার-২০১৪-এ তিনি নারী বিভাগে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছেন।
পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন হাতের কাছে পড়ার মতো যা-ই পান সময় পেলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। আর লেখালেখির ঝোঁকটা তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বলেও জানালেন। কারণ, মা কোহিনুর আখতার খানম কবিতা লিখতেন। বাবা কাজী এ কে এম আনোয়ার উল্লাহ ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা।
নানারকম রান্নার ওপর সুলতানা পারভীনের তিনটি বই ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালগ্রিনস নামক চেইন শপের সাময়িকীতে ছাপানোর জন্য ডায়াবেটিসের ওপর ৫০টি রেসিপি জমা দিয়েছেন।
সুলতানা পারভীন বাংলাদেশ নেভি ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য। নগরের পতেঙ্গায় নৌবাহিনী পরিচালিত ‘ঝিনুক’ নামক বিপণনকেন্দ্র তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুলতানা পারভীন আউটসোর্সিংয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী। তিনি বললেন, ‘বাইরে চাকরির পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘোরার দরকার নেই। এখন চাইলে কেউ ঘরে বসেই আয় করতে পারেন। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সে সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি এ বিষয়ে বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজনদের প্রায়ই বলে থাকি। আমাদের নেভি ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনেও এ নিয়ে আলাপ হয়েছে।’
ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে ৪০০-৫০০ রেসিপি নিয়ে নিজের একটি সাইট তৈরি করার।