‘ইউনাইটেড সাইবার খেলাফত’-এর মাধ্যমেই আইএসের একটি দল নিজস্ব হ্যাকিং টুলস এবং ম্যালওয়ার তৈরিসহ সাইবার আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

‘ইউনাইটেড সাইবার খেলাফত’-এর মাধ্যমেই আইএসের একটি দল নিজস্ব হ্যাকিং টুলস এবং ম্যালওয়ার তৈরিসহ সাইবার আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের আল কায়দার হামলার তারিখটিতে কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে (২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দা যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছিল) আইএস বড় ধরনের সাইবার হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে একটি টুইট বার্তায় আইএস ৯/১১ সামনে রেখে বড় ধরনের সাইবার হামলার একটি হুমকিও দেয়।

আইএস দাবি করেছে, এরই মধ্যে তারা প্রায় পাঁচ হাজার ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছে এবং নিয়মিত এগুলোর ওপর নজর রাখছে। এগুলোর সবই পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের।

বর্তমানে আইএস টুইটারে তাদের উপস্থিতি এবং সক্ষমতা সবচেয়ে জোরদার করেছে। এ ছাড়া তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য নিজস্ব উদ্ভাবনের প্রক্সি সার্ভার এবং টেলিগ্রাম কিংবা সুপারসপটের মতো এনসক্রিপটেড বা বিশেষায়িত সংকেতধর্মী চ্যাট মেসেঞ্জার ব্যবহার করছে। ফলে তাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের অনেক কিছুর ওপর বিভিন্ন দেশের সাইবার গোয়েন্দাদের নজর রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ফ্লাশ পয়েন্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সাময়িকভাবে আইএসের সাইবার ইউনিট কিছু অ্যাকাউন্ট সাধারণ নিয়মে হ্যাক করলেও সেগুলোতে নিয়মিত নজর রাখার মতো কিছু ঘটেনি। কারণ, যাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয় তারা পাসওয়ার্ড বদলে এবং নিরাপত্তার শর্ত আরও জোরদার করে নিজেদের অ্যাকাউন্ট নিরাপদ করে নিয়েছেন। অবশ্য নিউজ টেক ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত অনেক দেশও আইএসের বড় ধরনের সাইবার হামলার শিকার হতে পারে, কারণ এসব দেশের সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো সার্বিকভাবে দুর্বল।

সূত্রমতে, আইএসে যোগ দিয়ে ২০১৩ সালে আইএসের প্রথম স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট ‘খেলাফত সাইবার আর্মি’ লিংকনেম ‘সাইবার খেলাফত’ গঠন করেন ব্রিটিশ নাগরিক জুনায়েদ হোসাইন। দেশে আইএস অনুসারীদের মধ্যে থাকা হ্যাকারদের সংগঠিত করা ছিলো তার প্রথম কাজ। ২০১৫ সালের আগস্টে সিরিয়ায় এক ড্রোন হামলায় নিহত হন তিনি।

এর পর সাইবার ইউনিটের নেতৃত্বে আসে আইএসে যোগ দেওয়া জুনায়েদ হোসাইনের বন্ধু বাংলাদেশি নাগরিক সাইফুল হক সুজন। সুজন বাংলাদেশি নাগরিক হলেও দীর্ঘ সময় ইংল্যান্ডে অবস্থান করেন এবং তিনি শিক্ষাগত দিক দিয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনিও ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ায় ড্রোন হামলায় নিহত হন।

এরপর জুনায়েদ হোসাইনের স্ত্রী শেলি জোনস (পরবর্তী সময়ে যার নাম হয় আকা উম্মে হোসাইন ব্রিটানিয়া) আইএসের সাইবার হামলার মিশন চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন।

জুনায়েদ হোসাইনের মৃত্যুর পর আইএস অনুসারীরা কয়েকটি স্থান থেকে আরও একাধিক সাইবার ইউনিট গঠন করেন। কসোভোর নাগরিক আদ্রিত ফারিজি ইসলামিক স্টেট হ্যাকিং ডিভিশন গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে ইসলামিক সাইবার আর্মি, র‌্যাবিট আল আনসার, সনস খেলাফত আর্মি নামে আরও তিনটি সাইবার হামলা ও হ্যাকিং ইউনিট গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের শুরুতে সব ইউনিট সমন্বয়ে ‘ইউনাইটেড সাইবার খেলাফত’ গঠন করা হয়।