তার কর্মকান্ড দেখে পাড়ার লোকেরা হাসা-হাসি করতো। পাগল বলতো। নতুন কিছু আবিষ্কার করলে, সবাইকে ডেকে এনে দেখাতেন। তবে কেউ পাত্তা দিতো না। সেই পাত্তা না পাওয়া তরুণটি সবাইকে চমকে দিয়ে মানুষের প্রয়োজনীয় ৮টি প্রযুক্তি আবিষ্কার করবেন, হয়তো কেউ তা ভাবতেই পারেননি।

তার কর্মকান্ড দেখে পাড়ার লোকেরা হাসা-হাসি করতো। পাগল বলতো। নতুন কিছু আবিষ্কার করলে, সবাইকে ডেকে এনে দেখাতেন। তবে কেউ পাত্তা দিতো না। সেই পাত্তা না পাওয়া তরুণটি সবাইকে চমকে দিয়ে মানুষের প্রয়োজনীয় ৮টি প্রযুক্তি আবিষ্কার করবেন, হয়তো কেউ তা ভাবতেই পারেননি।

 

পুরো নাম কাজী এমরান হোসেন জুমন (৩১)। জন্মেছেন কুমিল্লা বাখরাবাদ চাপাপুর কাজী বাড়িতে। তিনি হলেন চার বোনের একমাত্র ভাই। অতিরিক্ত ক্রিকেট প্রীতি থাকায় অষ্টম শ্রেণীর পর পড়াশুনা হয়নি।

 

পরিবারের চাপাচাপিতে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরব চলে যান। তিনি প্রবাসে মেকানিকের কাজ করতেন। তখন তিনি কিছু কন্টাক্টর আইটেমের কাজ শিখে নেন। জুমন খুব পরিশ্রমী হওয়ায় দুই মালিকের টানাটানির দ্বন্দ্বে দুই বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন। মাষ্টাররুলে কর্মচারী হিসাবে চাকরি নেন বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে।

 

২০১২ সালে সাংবাদিক সাগর রুনি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে ঢাকায়। তা শুনে জুমনের মাথায় চিন্তা এলো এমন কি করা যায়, যাতে ফ্ল্যাট বাসায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। বউয়ের গয়না বিক্রির টাকা দিয়ে কিছু সরঞ্জাম কিনে শুরু করলেন গবেষণা।

 

দীর্ঘ গবেষণার পর তিনি আবিষ্কার করলেন লাইফ সিকিউরিটি সিস্টেম। হত্যাকারী বাসায় ঢুকেছে টের ফেলে শুধু একটা সুইচে ক্লিক করলেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে দরজা লক হয়ে যাবে, যাতে হত্যাকারী পালাতে না পারে।

 

অ্যালার্ম বাজবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে থানায় কল যাবে। তার এই অভিনব আবিষ্কারে জন্য বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও শিল্পপ্রযুক্তি মেলা ২০১৬ তে স্ব-শিক্ষিত বিজ্ঞানী ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পান। নগদ ৩০ হাজার টাকা সহ পুরস্কার তুলে দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। উৎসাহ অনেক গুণ বেড়ে যায়।

 

প্রতিনিয়ত যখন গার্মেন্ট ও মার্কেটে অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও শ্রমিক মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তখন জুমন নড়েচড়ে বসে, কিছু একটা করতে হবে। নতুন ফর্মুলা আবিষ্কারের নেশায় রাত জেগে গবেষণা করতে থাকেন। আবিষ্কার করেন সিকিউরিটি ফায়ার সিস্টেম।

 

ধোঁয়া বা উত্তাপ সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনটি কাজ করবে- বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ হয়ে যাবে, বিকট শব্দে অ্যালার্ম বাজতে থাকবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঁচটি নম্বরে কল যাবে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে কেউ এগিয়ে না এলে অটো আগুন নেভাতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হবে। ২৫ মিনিট পর অটো পানির পাম্প চালু হয়ে পানি নির্গত হবে। ততক্ষণে আগুন নিভে যাবে।

 

এছাড়া জুমন আরো আবিষ্কার করেন ভূমিকম্পন অনুভব সিস্টেম, দোকান সিকিউরিটি সিস্টেম, অটো লক সিকিউরিটি, লাইট সিস্টেম নিয়ন্ত্রন, বাউন্ডারি ওয়াল সিকিউরিটি, দরজা অটো লক ও পানির পাম্প নিয়ন্ত্রণ আবিষ্কার করেন।

 

জুমন অর্জন করেছেন চে গুয়েভারা অ্যাওয়ার্ড ২০১৬। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জুমনের আবিষ্কারগুলো পরিদর্শন করে ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান জুমনের আবিষ্কারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জুমনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় করেছেন।

 

জুমন জানান, ৯টা-৫টা বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে কাজ করেন, রাতে বাসায় ফিরে যা সময় পান গবেষণার পেছনে সময় দেন। জুমন গবেষণা করে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চান। জুমন বলেন, ‘যেভাবে হোক বড় কিছু করতে হবে। মইরা যামু, তবুও হাল ছাড়ুম না।’

 

জুমন পারিবারিক জীবনে বিবাহিত। দুই সন্তানের জনক। তার সাত বছর বয়সী বড় ছেলে কাজী জায়েদুল ইসলাম জুবায়ের এখন নার্সারিতে পড়েন। জুমনের ইচ্ছা ছোট বেলা থেকে ছেলেকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলবেন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেন, যাতে ছেলে বড় হয়ে বড় বিজ্ঞানী হতে পারেন। -রাইজিংবিডি।