বাদশাহ নমরূদের বিপক্ষে যুদ্ব করলো আল্লাহর প্রেরিত সৈন্যবাহিনী মশা- সুবহানাল্লাহ

বাদশাহ নমরূদের বিপক্ষে যুদ্ব করলো আল্লাহর প্রেরিত সৈন্যবাহিনী মশা- সুবহানাল্লাহ

কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন:- যখন সে (নমরুদ) ইব্রাহিমের সাথে তার প্রতিপালক সম্পর্কে তর্ক করেছিল, তখন ইব্রাহিম (আ) বলল, ‘আমার প্রতিপালক তিনি, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।’ সে বলল, ‘আমিও জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি।’ ইব্রাহিম (আ) বলল, ‘নিশ্চয় তিনি সূর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে, এবার তুমি তাহলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করে দেখাও।’ তখন সে অবিশ্বাসী (নমরূদ) হতভম্ব হয়ে গেলো।

এ কারণেই এ সময়ে নমরুদ ইব্রাহিম (আ) এর সাথে পুনরায় তার প্রতিপালক সম্পর্কে বিতর্কে না গিয়ে সরাসরি ফয়সালার পথ বেছে নিল। আর তাই সে বলল, ‘হে ইব্রাহিম! দুনিয়ার রাজত্ব তো আমার। শীঘ্রই আকাশের রাজত্বও আমি তোমার আল্লাহর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেব।’

তখন ইব্রাহিম (আ) বললেন, ‘হে নমরুদ, তুমি কিভাবে আকাশে পৌঁছাবে ?

নমরূদ বলল, ‘আমার বিজ্ঞ পরিষদবর্গই এ ব্যাপারে আমাকে বলে দেবে।’

অতঃপর নমরুদ যখন এ ব্যাপারে পরিষদবর্গের পরামর্শ চাইল, তখন পরিষদবর্গের একজন হয়ে ইবলিস তাকে পূর্ণ পরামর্শ দিল। সুতরাং নমরুদের হুকুমে চারটি বড় বড় শকুনকে লালন-পালন করা হল। অতঃপর একটি সিন্দুক তৈরি করে শকুন চারটিকে কয়েকদিন অভুক্ত রেখে ঐ সিন্দুকের চার কোনায় বেঁধে দেয়া হল। তারপর সিন্দুকের উপরদিকে শকুনের নাগালের বাইরে কিন্তু দৃষ্টির সীমানায় ঝুলিয়ে দেয়া হল মাংসের টুকরো।

নমরুদ ও তার সেনাপতি প্রস্তুত হয়ে টাওয়ার অব বাবিলের চূড়া থেকে সিন্দুকে আরোহণ করল। উল্লেখ্য আকাশের রাজত্ব দখলের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে নমরুদ টাওয়ার অব বাবিল নির্মাণ করেছিল।

ঊর্ধ্ব আকাশে পৌঁছে নমরুদ ও তার সেনাপতি একের পর এক তীর উপরের দিকে নিক্ষেপ করলেন। ঐ সময় আল্লাহ জিব্রাইলকে বললেন, ‘আমার এই বান্দা যেন নিরাশ না হয়। সুতরাং তার তীরগুলোকে রক্তরঞ্জিত করে ফেরৎ পাঠাও।’

মাটিতে অবতরণের পর নমরুদের রক্ষীরা নিক্ষিপ্ত তীরগুলি কুড়িয়ে আনলো। যেগুলো পাওয়া গেল তার সবগুলোই রক্তরঞ্জিত। নমরুদ রক্তমাখা তীরগুলি দেখে সফলতার আনন্দে আত্মহারা হয়ে ইব্রাহিম (আ) কে বললেন, ‘হে ইব্রাহিম! আমি তোমার খোদাকে হত্যা করেছি, তীরে লেগে থাকা রক্তই তার সাক্ষ্য বহন করে।’

ইব্রাহিম বললেন, নিশ্চই ‘আমার স্রষ্টা চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।’

নমরুদ বলল, ‘ঠিক আছে, তিনি যদি মারা গিয়ে না থাকেন, তবে তাঁর সৈন্যদলকে একত্রিত করতে বল। আমিও আমার সৈন্যদল ময়দানে সমবেত করছি।’

তখন নবী হযরত ইব্রাহিম (আ) বললেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর, তিনিই তো তোমাকেকে রাজ্য ও রাজত্ব দান করেছেন। আর তিনিই পরজগতের প্রতিফলদাতা।’

নমরুদ বলল, ‘আমিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং তোমার আল্লাহ বলে যদি কেউ থাকেন, তবে অবশ্যই তাকে আমার শক্তির মোকাবেলা করতে হবে।’

আল্লাহ ও নবীর দূশমন নমরুদ ষাট লাখ সেনা ময়দানে সমবেত করল। এদিকে প্রতিপক্ষের কোন দেখা নেই। নমরুদ ইব্রাহিমকে বললেন, ‘তোমার প্রতিপালকের সেনাদল কোথায়? তিনি নিশ্চয় আমার শক্তিবল দেখে ভীত হয়ে পশ্চাৎপসারণ করেছেন।’

হযরত ইব্রাহিম (আ) বললেন, ‘আমার রব ক্ষমতায় মহান, কোনরূপ ভীতি তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না, বরং তিনিই তা প্রদর্শন করে থাকেন। একথা নিশ্চিত যে তার সেনাদল ময়দানে এসে পৌঁছিবেই-আর তা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই।’

নমরুদ সেনাপতিদের বলল, ‘প্রস্তুতি নাও, যুদ্ধ পতাকা উড়িয়ে দাও, সতর্ক হও, নাকাড়া বাজাও।’

ষাট লাখ সেনার শোরগোলে ভূমি প্রকম্পিত হলো। নমরূদ পুনরায় ইব্রাহিম (আ.)কে বললেন, ‘কোথায় তোমার রবের সৈন্যদল?’

তখন হযরত ইব্রাহিম (আ) দূরে আকাশের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন। দূরে কাল রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছে। যখন সেটা কাছে মাথার উপর চলে এল, তখন লাখ লাখ মশার গুণ গুণ কলতানে চারিদিক মুখরিত হলো।

কিন্তু নমরুদ এদের ব্যক্তিত্বকে খাটো করে দেখে, অবজ্ঞার সূরে বলল, ‘এ তো সামান্ন মশা। মশা! তুচ্ছ এই প্রাণী, তার উপর নিরস্ত্র। তোমার রবের কি অস্ত্র-ভান্ডার নেই?’

হযরত ইব্রাহিম (আ) বললেন, ‘আমার রবের বাহিনী সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাই নেই। তোমার এই বিশাল বাহিনীর জন্যে তিনি এই তুচ্ছ, নিরস্ত্র মশাকেই যথেষ্ট মনে করেছেন।