মানুষ আসলে কী চায় জীবনে? অনেক কিছুই তো চায় যেগুলো আসলে তার নিজের চাহিদা না, বাইরে থেকে ইনজেক্ট করা চাহিদা। নিজের চাহিদাগুলো আসলে কী? কতটুকু পাইতেছে?

মানুষ আসলে কী চায় জীবনে? অনেক কিছুই তো চায় যেগুলো আসলে তার নিজের চাহিদা না, বাইরে থেকে ইনজেক্ট করা চাহিদা। নিজের চাহিদাগুলো আসলে কী? কতটুকু পাইতেছে?

ছোটবেলায় মানুষ চায় শুধুই বাবা-মায়ের ভালোবাসা। সময়। বাবাকে তো অধিকাংশই পায় কম, মা’কে অন্তত কাছে চায়। আধুনিক সভ্যতা মানুষের কাছ থিকা তাদের বাবা-মা’কে কেড়ে নিছে।

টিনেজ বয়সে চায় তারে লোকজন একটু বোঝার চেষ্টা করুক। কিন্তু মানুষের সময় কৈ আজকাল, তারে বোঝার?

টিনেজ পার হইলে চায় একটু সাপোর্ট। আর্থিক না, মানসিক। যাতে হঠাৎ করেই বাস্তব জীবন নামক সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে পাশে কাউকে পায়, যে তারে সাহস দিবে। ঝড় উঠলে অভয় দিবে। আর চায় একটু ভালোবাসা। বড়দের কেউ ভালোবাসে না। কেউ জড়িয়ে ধরে না। সে এইসব মিস করে।

আরেকটু পরে, বিবাহিত জীবনে সে চায় একটু শান্তি। মেয়েরা নিরাপত্তা, স্বচ্ছলতা আরো হ্যান-ত্যান অনেক কিছু চায় হয়তো কিন্তু ছেলেরা শুধুই একটু শান্তি চায়। পায় না, সেই সভ্যতার সংকটের কারণেই। অনেক ছেলেই ঐ সময় ডমিনেন্ট হওয়ার চেষ্টা করে। এইটা সে করে কারণ সে জানে না সে আসলে কী চায়। ভালোবাসার অভাবে এইটা হয় বইলা আমার ধারণা। কতদিন তারে কেউ ভালোবাইসা জড়াইয়া ধরে নাই। আবার, যাদের লাইফ পার্টনার তাদের এই অভাব দূর করতে পারছে, তারা ডমিনেট করার চেষ্টা করে না। আলোচনা করে সব সমাধান করে, সিদ্ধান্ত নেয়। যৌথ প্রযোজনায় জীবন কাটায়। এরকম মানুষের সংখ্যা আজকাল খুব কম। এইটা এই সভ্যতার সমস্যা।

আরো পরে, সে চায় তার ছেলে-মেয়েরা একটু ভালো থাকুক। নিজে যেইটা পায় নাই জীবনে সেইটা যেন ছেলেমেয়েরা পায়, সেইটার ব্যবস্থা করতে চায়। কবির ভাষায়- ছেলেমেয়েগুলো যেন থাকে দুধে ভাতে।

এরপর মানুষ কী চায়? বৃদ্ধ বয়সে?
ততদিনে পৃথিবীর তাবৎ সুখের সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে গেছে। অতীতের সকল সুখের বস্তু তার কাছে বোরিং লাগে। সে তখন হঠাৎ করে আবিষ্কার করে, শুধু আরেকজনর সঙ্গই তারে আনন্দ দেয়। আর কিছু না। কিন্তু তারে সঙ্গ দেয়ার মত কেউ কি আছে? সে সারাজীবন ধরে কি এমনভাবে চলছে যাতে তারে অন্যরা সঙ্গ দিবে? আধুনিক সভ্যতা তারে এত ব্যস্ত করে রাখছিলো যে সে সত্যিকার কিছু বন্ধু বানানোর সময় পায় নাই। নিজের ছেলেমেয়েদের সাথেও দুরত্ব তৈরি হয়ে যায়, শুধুই জাগতিক কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে। তারপর বন্ধুহীন, ভালোবাসাহীন একটা অসহনীয় জীবন কাটায়। এই সময়টায় সে ছোটবেলার মতই বাবা-মায়ের অকৃত্তিম ভালোবাসা চায় শুধু। কিন্তু তার তো বাবা-মা বেঁচে নাই। বন্ধুও নাই। সে নিজেই সব ধ্বংস করে বসে আছে। এইসময় কি তাদের কখনো মনে হয় যে- ইশ, যদি আবার জন্মাইতাম, তাহলে সব ঠিকঠাকমত করতাম? কে জানে! তাদের কথা শোনার লোকও তো নাই কোথাও।