বাগমারায় একটি লোকও বেকার থাকবে না

আমার টার্গেট বাগমারাতে একজন মানুষও বেকার থাকবে না। এর জন্য যা যা করার দরকার সেই কাজ আমি করছি। যেমন বাগমারাতে একটি বড় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি করছি। আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে সেখানে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে প্রায় ৬০% নিয়োগ বাগমারার লোকদের জন্য ফিক্সড থাকবে। এটা আমার টার্গেট। বাগমারার কোনো মানুষ অশিক্ষিত থাকবে না। এটা আমার ‍টার্গেট। এর জন্য যা যা করার দরকার আমি করবো। ওখানে ডিগ্রি কলেজ করছি, দুইটা অনার্স কলেজ আছে। আমার স্বপ্ন একটা কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চিন্তা মাথায় রেখেই এগোচ্ছি। এজন্য একটি ভবন তৈরি করেছি। 

রাজশাহী বিসিক এলাকাতে সাকোয়া টেক্স নামে একটি বড় গার্মেন্ট কারখানা করেছি। জুলাই মাসে সেটি  উদ্বোধন করা হবে। প্রায় ৮ বিঘা জমির উপর নির্মিত এই কারখানার পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। সেখানে ১৮০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের মধ্যে ১০০ জনই বাগমারার। আমি একটা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করবো।  সেখানে যারাই ট্রেনিং করে ফিট হবে, আমরা চাকরি দেব। ২০১৮ সালের মধ্যে আমরা ১০ হাজার লোককে চাকরি দেব। এদের মধ্যে ৬ হাজারই হবে বাগমারার। 
 
বাংলানিউজ: আপনার কাজের মূল্যায়ন যদি আপনি নিজে করেন তাহলে কতভাগ কাজ করতে পেরেছেন বলে মনে করেন?

এনামুল হক: উন্নয়ন একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমার মনে হয়, যতটুকু আমি চেয়েছি, তার পুরোটাই করতে পেরেছি। বলতে পারেন হান্ড্রেড পার্সেন্ট (শতভাগ)। সামাজিক উন্নয়নের ইনডেক্স যদি দেখেন তাহলে বলবো, বাগমারাতে শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমেছে। আমাদের বাগমারার ফ্যামিলি  প্ল্যানিং অফিসার তিনবার বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হয়েছেন। জন্মহার যেখানে জাতীয়ভাবে ২.১৪ শতাংশ, সেখানে বাগমারায় দশমিক ৫২ শতাংশ। মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে জাতীয় পর্যায়ের চাইতে আমরা অনেক এগিয়ে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে গেছি। শিক্ষাক্ষেত্রেও আমরা রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সব সময়েই প্রথম। 

কাজেই আমি যতটুকু চিন্তা করেছিলাম, আমার মনে হয়, সবটুকই অর্জিত হয়েছে। বাগমারাকে তো একবারে সিঙ্গাপুর করা যাবে না! সারাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেতে হবে। তবে এখনও কমিউনিকেশনে কিছু কাজ বাকি আছে। যেমন, মেইন রোড করতে হবে জেলাশহরে। বাগমারাতে এখন ৮০ শতাংশ মানুষের ঘর পাকা হয়ে গেছে।

বাংলানিউজ: আগামী নির্বাচনে ঘিরে আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক এমপিদের ডাকতে শুরু করেছেন, আপনি ডাক পেয়েছেন কি ?

এনামুল হক: আমি পাইনি। দেখুন দলের জন্য কাজ করা আর মনোনয়ন এক না। আমি তো ট্র্যাডিশনাল পলিটিশিয়ান ছিলাম না। নেত্রী অত্যন্ত স্নেহ করে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমার যতটুক সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করছি। সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবো সেটাও বলছি না। তারপরেও কিন্তু চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার চেষ্টার ত্রুটি নেই। আমি মাসে মিনিমাম (কমপক্ষে) ৮ থেকে ১০ দিন এলাকাতে কাটাই। প্রত্যেক মাসে, প্রত্যেক সপ্তাহে এলাকায যাই। সংসদেও আমার অংশগ্রহণ কম না। গত শীতকালীন অধিবেশনে ৩১ দিনের মধ্যে ২৯দিনই আমি উপস্থিত ছিলাম। এমপির যে কাজ সেটা আমি পারফর্ম করে যাচ্ছি। মূল্যায়ন নেত্রী করবেন। এখন দলের যেটা সিদ্ধান্ত হয়, সেটা অবশ্যই মেনে নেব।
 
বাংলানিউজ: দলের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?

এনামুল হক: আমার নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের যে প্ল্যানিং, তার একটি হলো দারিদ্র্য বিমোচন আর একটি হলো দেশকে একদিন উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়া। গরীব মানুষের ভাগ্যের  উন্নয়ন করা। এভাবে দেশটাকে একটা মর্যাদার জায়গায় পৌঁছে দেওয়া।একারণে দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। এমন নয় যে দলীয় সংকীর্ণতার মধ্যে আটকে থাকতে হবে। আমি মনে করি, দলীয় সঙ্কীর্ণতায় আটকে গেলে চলবে না।
 
আমার প্রত্যাশা, নেত্রীর যে বার্তা তা যদি আমরা জনপ্রতিনিধিরা সবাই মেনে চলি, সেভাবে কাজ করি  তাহলে দেশটা খুব তাড়াতাড়ি সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়াকে টেক্কা দেবে। বা এদের কাতারে বা কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে। আমরা চাই না, দলীয় সঙ্কীর্ণতায় আটতে যেতে। তাতে কেবল রেষারেষি-হানাহানিই বাড়ে। এমনটা যেন না হয় সেই চেষ্টাই করছি। যেদিন আমি নির্বাচিত হই সেদিন প্রথমেই হাজার হাজার মানুষের সামনে বলেছিলাম, আমি এখন বাগমারার ৪ লাখ মানুষের এমপি। সেই বার্তাটা সবার কাছে পৌঁছেছে। মানুষ বিশ্বাস করেছে। এটাই আমার প্রত্যাশা ও সাফল্য।
 
আজ উচ্চশিক্ষায় বাগমারার ছেলেমেয়েরা এগিয়ে। আমাদের বাগমারার ৩৫ জন ছেলেমেয়ে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে, বুয়েট চান্স পেয়েছে। প্রতিটা বিসিএস পরীক্ষায় বাগমারার ৮-১০ জন থাকছেই। এগুলো উন্নয়নের ইনডেক্স। সেনাবাহিনিতে এবার সর্বোচ্চ ৩৫ জন, পুলিশে ৩৪ জন চান্স পেয়েছে। এরকম এসএসএফ-এ ১৫ জন, পিজিআর-এ ১৮ জন চাকরি পেয়েছে। এগুলোতে নানাভাবে আমার কাজ করতে হয়েছে। ওইসব জায়গায় রিফ্রেশ সোলজার ছাড়া তো তারা নেবে না। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে আমি মনে করি, আগামী ৫ বছেও যদি আমাদের সরকার দায়িত্ব নেয় তাহলে আমরা মানুষের কল্যাণে আরও অনেক কাজ করতে পারবো। তাহলে বাগমারাতে তো অবশ্যই, বাংলাদেশে সন্ত্রাস বলে কিছু থাকবে না। 

বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

এনামুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

mp-enamul